ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে চাপে পড়ুয়ারা, অনিশ্চয়তার মুখে মার্কিন উচ্চশিক্ষা স্বপ্ন

মার্কিন মুলুকে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা লাখো বিদেশি ছাত্রছাত্রীর জন্য বড় ধাক্কা। বিশেষ করে ভারতের মতো দেশে, যেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখেন, তাঁদের স্বপ্নে আচমকাই লাগাম পরল। কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) প্রশাসন হঠাৎ করেই স্টুডেন্ট ভিসার ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্বের সমস্ত মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলার দপ্তরগুলিকে।

সোশ্যাল মিডিয়া যাচাইই মূল কারণ?

সূত্রের খবর, ট্রাম্প প্রশাসন এখন থেকে ছাত্র ভিসার আবেদনকারীদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল ঘেঁটে দেখবে। যাঁরা আমেরিকা বা তার মিত্র ইজরায়েলের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছেন, তাঁদের আবেদনকে বিশেষভাবে পর্যালোচনা করা হবে। Politico নামক এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৭ মে প্রকাশিত এক সরকারি চিঠিতে বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও এই সংক্রান্ত নির্দেশ দিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, “প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা যাচাই সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সমস্ত স্টুডেন্ট ভিসার সাক্ষাৎকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।”

ভারতে আমেরিকান দূতাবাস কী বলছে?

নতুন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি দিল্লির মার্কিন দূতাবাস। তবে ২৭ মে, মঙ্গলবার একটি সতর্কবার্তা জারি করে জানানো হয়েছে — কোনও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যদি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে নিয়মিত ক্লাসে না যান, বা হঠাৎ প্রোগ্রাম ছেড়ে দেন, তাহলে তাঁদের ছাত্র ভিসা বাতিল করা হতে পারে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now

ভারতীয় পড়ুয়াদের স্বপ্নে ভাঁটা

এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে ভারতীয় ছাত্রদের উপর। কারণ, মার্কিন সরকার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি পড়ুয়াদের মধ্যে ভারতের স্থান শীর্ষে। আর এখন সেই পথেই অনিশ্চয়তার মেঘ। বিশেষ করে যাঁরা গ্রীষ্মকালীন বা শরৎকালীন সেমেস্টারে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ কার্যত ঝুলে রইল।

আগেই দেখা গিয়েছিল আঁচ

গত কয়েক মাস ধরেই অভিবাসন নীতি কঠোর করছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্চ মাসে, কানাডায় “স্ব-নির্বাসন” গ্রহণ করেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় স্কলার রঞ্জিনী শ্রীনিবাসন — তাঁর বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইন-পন্থী আন্দোলনে অংশগ্রহণের অভিযোগ ছিল। যদিও পরে তিনি তা অস্বীকার করেন।

এছাড়াও, মে মাসের শুরুতে ভারত-ভিত্তিক কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনি অভিবাসনে সহায়তা করার অভিযোগে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ট্রেন যাত্রার সময় সমস্যা? রেলের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে অভিযোগ জানালেই মিলবে দ্রুত সমাধান

ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত সাময়িক, তবে এটি কতদিন চলবে বা কবে পুনরায় সাক্ষাৎকার শুরু হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা পড়ুয়াদের দুশ্চিন্তা।

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শুধু একটি ডিগ্রি নয়, বরং একাধিক ক্যারিয়ার ও গবেষণার দিগন্ত খুলে দেয়। ট্রাম্প প্রশাসনের এই হঠাৎ কড়াকড়ি আর সোশ্যাল মিডিয়া যাচাইয়ের নির্দেশ সেই পথেই যেন এক অদৃশ্য কাঁটাতার টেনে দিয়েছে। আপাতত, সমস্ত চোখ হোয়াইট হাউসের পরবর্তী ঘোষণার দিকে — কারণ তা নির্ধারণ করবে কতটা দ্রুত স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারবে আমেরিকার বহুজাতিক ছাত্রসমাজ।

Leave a Comment