সৌভিক মুখার্জী, কলকাতাঃ প্রতিদিন মাটি খোঁড়া হচ্ছে, আর ধীরে ধীরে যেন উন্মোচিত হচ্ছে এক অন্তিম রহস্য। একটি প্রাচীন শিব মন্দিরের সংস্কার কাজ চলাকালীন একের পর এক শিবলিঙ্গের সন্ধান মিলছে। হ্যাঁ একদম ঠিকই শুনেছেন, যা থেকে অবাক গোটা গ্রাম।
বীরভূমের নানুরের সাকুলিপুর গ্রামে (Birbhum News) এই মন্দিরটির সংস্কার কাজ শুরু হয়েছিল। প্রাচীন এবং ভগ্নপ্রায় হয়ে পড়েছিল অনেকদিন ধরে এই মন্দিরটি। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা একসঙ্গে মিলে মন্দিরটি নতুন করে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু কাজ শুরু হতে সামনে আসে এক অদ্ভুত ঘটনা। মাটি যতই খোঁড়া হচ্ছে ততই দেখা যাচ্ছে শিবলিঙ্গ।
গ্রামবাসীদের প্রতিক্রিয়া | Birbhum News |
এই দৃশ্য দেখাতে গ্রামের মানুষ হতবাক। প্রথমে তারা ভেবেছিলেন, হয়তো একটি বড় শিবলিঙ্গের অংশ ধরা পড়েছে। কিন্তু খনন যত গভীর হচ্ছে, ততই নতুন নতুন শিবলিঙ্গের খোঁজ মিলতে থাকছে। এই ঘটনায় গ্রামের মানুষদের মনে নানা রকম প্রশ্ন বাসা বাঁধছে। কেউ বলছে, না এটি একটি অলৌকিক ঘটনা। আবার কেউ মনে বলছেন, এখানে গুপ্তধনের সন্ধানে লুকিয়ে থাকতে পারে।
কী বলছে স্থানীয়রা?
গ্রামের এক প্রবীণ বাসিন্দা সন্তোষ বটব্যাল বলেছেন, “আমার দাদু আগে এই মন্দিরে পূজা করতেন। তখন থেকে শোনা যেত এখানে পাতালেশ্বর শিব রয়েছে। এবার সেটারই প্রমাণ মিলছে।”
অন্যদিকে গ্রামের বাসিন্দা মুন্সি গোলাম জানিয়েছেন, “এটি গ্রামের সম্প্রীতি। বহু বছর আগে পারস্য থেকে আমাদের পূর্বপুরুষরা এখানে এসে বসতি করেছিলেন। তখন থেকে এখানে হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে বাস করছে। মন্দিরটির পুনঃনির্মাণের খবর শুনে আমি খুব আনন্দিত ছিলাম। কিন্তু এই শিবলিঙ্গগুলোর সন্ধান পুরো বিষয়টাকে আরো রহস্যময় করে তুলেছে।”
কী রয়েছে মন্দিরের অতল গভীরে?
গ্রামের মানুষের বিশ্বাস, এটি পাতালেশ্বর শিবের কোন আবির্ভাবস্থল। কথিত রয়েছে, শিব এখানে স্বয়ম্ভূ রূপে বিরাজমান এবং তার কোনরকম শেষ নেই। সেই কারণেই খনন যত গভীর হচ্ছে, ততই শিব লিঙ্গের সন্ধান মিলছে।
ইতিহাস কী বলছে?
সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যাপক পার্থ শঙ্খ মজুমদার জানিয়েছেন, সাকুলিপুরের ইতিহাস বহু পুরনো। একসময় এটি ‘কিসমত সাখলি পুর’ নামে পরিচিত ছিল। ধর্মমঙ্গল কাব্যের সঙ্গেও এই গ্রামের অতীতে সম্পর্ক রয়েছে। তাই ধরে নেওয়া হয়, বহু শতাব্দি আগে এখানে শিব পূজা করা হতো।
তার মতে, প্রাচীনকালে নির্মিত মন্দিরের অনেকাংশ হয়তো মাটির নিচে বর্তমানে চাপা পড়ে গেছে। আর সংস্কারের সময় সেই অংশগুলি ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন: গাড়িতে ৫ জন তুললেই দিতে হবে মোটা অঙ্কের ফাইন, দেখুন নতুন ফাইনের তালিকা
থামিয়ে দেওয়া হল কাজ
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশেপাশের এলাকা থেকে বহু মানুষ সেখানে ভিড় জমাতে শুরু করেছে। তবে আপাতত মন্দির কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, খনন কাজ বন্ধ রাখা হবে। কারণ গ্রামবাসীরা মনে করেন শিবলিঙ্গের কোন শেষ নেই। তাই বেশি গভীরে না যাওয়াই ভালো। আর এতে এলাকা জুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল মন্দির পুনঃনির্মাণ। অতিরিক্ত খননের ফলে তা ব্যাহত হতে পারে।
রহস্যের সমাধান হবে?
এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন, এই শিব লিঙ্গের শেষ কোথায়? মন্দিরের নীচে সত্যিই কিছু রয়েছে, নাকি কিছু গুপ্ত রহস্য লুকিয়ে রয়েছে? গ্রামবাসীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কিছুদিন পর বিশেষ পুজো করে এই ঘটনার অর্থ বোঝার চেষ্টা করবেন। তবে আপাতত এটি শুধু বীরভূম জেলার নয়, গোটা রাজ্যের জন্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।