বাংলাদেশের চট্টগ্রাম আদালতে ঘটল এক চাঞ্চল্যকর মোড়। দেশদ্রোহীতার মামলায় জামিন পেলেও হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে (Chinmoy Krishna Das) মুক্তি দেওয়া হল না। বরং তার মুক্তির আগেই তাকে জড়িয়ে দেওয়া হল চারটি খুনের মামলায়। এই ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও সংখ্যালঘুদের প্রতি সরকারের মনোভাব নিয়ে।
কী ঘটেছে আসলে?
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস-কে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছেন এবং দেশবিরোধী মন্তব্য করেছেন। চিন্ময় দাস বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং পূর্বে ইসকনের (ISKCON) একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন।
তবে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোনও যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। হাইকোর্টে তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা জোরালো যুক্তি দেন এবং বিচারপতি আতর রহমান ও বিচারপতি আলি রেজা-র বেঞ্চ তাকে জামিন দেন।
জামিন পেয়েও মুক্তি নয়, নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানো!
চিন্ময় দাস জামিন পাওয়ার পরপরই রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার আদালতে স্থগিতাদেশ চায়, তবে আদালত শুধু পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করে। এর মধ্যেই চট্টগ্রামের আদালতে তাঁকে চারটি খুনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
এই মামলা গুলির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ২০২৪ সালের নভেম্বরে সংঘটিত একটি সহিংস ঘটনা, যেখানে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। এই হামলার সময় চিন্ময় দাস-এর মুক্তির দাবিতে একটি মিছিল চলছিল। তবে তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় চিন্ময় দাস সরাসরি কোনও ভাবেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
একপাক্ষিক শুনানি, অনুপস্থিত ছিলেন আইনজীবী
চিন্ময় দাসের পক্ষের আইনজীবী অপুর্ব ভট্টাচার্য ANI-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “চট্টগ্রামের আদালতে যে শুনানি হয়েছে, তা ছিল একেবারেই একপাক্ষিক। আমাদের কোনও নোটিস দেওয়া হয়নি। কেউ চিন্ময় দাসের পক্ষে বক্তব্য রাখার সুযোগও পাননি। এটা স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক চাপে নেওয়া সিদ্ধান্ত।”
তিনি আরও বলেন, “চিন্ময় দাসের বক্তব্যে, কাজে বা চিন্তায় কোথাও দেশদ্রোহিতা নেই। সমস্ত অভিযোগই ভিত্তিহীন।”
প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক চাপ। একজন হিন্দু ধর্মপ্রচারক, যিনি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন, তাঁকে নতুন খুনের মামলায় অভিযুক্ত করে আটকে রাখার চেষ্টা কতটা গণতান্ত্রিক বা মানবিক, তা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে।
আরও পড়ুন: ছন্দহীন নাইটরা! কোন সমীকরণ ধরে প্লে-অফে পৌঁছতে পারবেন অজিঙ্কা রাহানেরা?
চিন্ময় দাস এখনো জেলে, যদিও তিনি জামিনপ্রাপ্ত। আর তার মুক্তির সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেই একের পর এক নতুন মামলা দায়ের করে তাঁকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠছে। প্রশ্ন উঠছে, এটা কি বিচারপ্রক্রিয়া, না কি রাজনৈতিক প্রতিশোধ?
ঘটনার উপর নজর রাখছে মানবাধিকার সংস্থা থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও। ভবিষ্যতে এই মামলার মোড় কোনদিকে যায়, তা এখন বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতার বড়ো পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।