বং নিউজ, ওয়েবডেস্কঃ নিজের বাড়িতে জলের ট্যাঙ্ক (Water Tank) পরিষ্কার করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন? অনেকেই মনে করেন এটি খুবই কঠিন কাজ। তাই বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে এই কাজ করেন। কিন্তু জানেন কি? সঠিক উপায় জানা থাকলে খুব সহজেই আপনি নিজেই বাড়ির জলের ট্যাংক পরিষ্কার করতে পারবেন। তাও অতিরিক্ত কোন খরচ ছাড়াই।
জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরী। কারণ নোংরা এবং জীবাণুমুক্ত জল শরীরে বিভিন্ন রকম রোগ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে গরমকালে ট্যাংকের জল খুব বেশি দূষিত হয়। তাই বছরে অন্তত দুইবার এটি পরিষ্কার করা সব থেকে বুদ্ধিমানের কাজ। চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে সহজেই ঘরোয় পদ্ধতিতে জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করবেন।
প্রস্তুতি: কাজ শুরুর আগে যা যা করবেন
সর্বপ্রথম ট্যাংকের ভিতরের সমস্ত জল বের করে ট্যাঙ্ক খালি করুন। তারপর ট্যাঙ্কের নিচে জমে থাকা কাঁদা এবং ময়লাগুলিকে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। এরপর একটি লম্বা ব্রাশ বা লাঠির সাহায্যে ট্যাঙ্কের দেওয়াল ও কোণগুলি পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, পরিষ্কার করার সময় গ্লাভস বা মাক্স ব্যবহার করুন, যাতে ক্ষতিকর কোন জীবাণু বা রাসায়নিক পদার্থ আপনার সংস্পর্শে না আসতে পারে।
পরিষ্কার করার সহজ পদ্ধতি | How to Clean Water Tank |
জলের ট্যাঙ্ক বিভিন্নভাবে পরিষ্কার করা যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পদ্ধতি হল-
পদ্ধতি ১: বেকিং সোডার জাদু
প্রথমে এক কাপ বেকিং সোডা জলে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এরপর এই পেস্ট ট্যাঙ্কের ভেতরের দেওয়ালে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর শক্ত একটি ব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে ঘষে পরিস্কার করুন এবং জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ট্যাঙ্কের ভেতরে সমস্ত রাসায়নিক এবং জীবাণু দূর করতে সাহায্য করবে।
পদ্ধতি ২: ভিনিগার স্প্রে ব্যবহার করুন
ভিনিগার এবং জল সমপরিমাণে মিশে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপর সেটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন। এই দ্রবণটি ট্যাঙ্কের গায়ে স্প্রে করে খানিকক্ষণ অপেক্ষা করুন। এরপর ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিস্কার করে দিন এবং পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভিনিগার প্রাকৃতিক জীবনুনাশক। এটি ব্যাকটেরিয়া এবং দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
পদ্ধতি ৩: ব্লিচিং পাউডারের শক্তি
এক বালতি জলে সামান্য পরিমাণে ব্লিচিং পাউডার গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এরপর এই মিশ্রণ ট্যাঙ্কের ভেতরে ঢেলে কিছুক্ষণ রেখে দিন। তারপর ব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে ঘষে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মনে রাখবেন, ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করার সময় মুখ ঢেকে রাখবেন এবং বেশি পরিমাণে ব্যবহার করবেন না।
পদ্ধতি ৪: নিম পাতার প্রাকৃতিক জীবনুনাশক গুণ
প্রথমে কিছু নিমপাতা জলে ফুটিয়ে নিন। এরপর সেই জল ট্যাঙ্কের মধ্যে ঢেলে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর সাধারণ জল দিয়ে ট্যাঙ্ক ধুয়ে ফেলুন। নিমের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ ট্যাঙ্কের সমস্ত জীবাণু খুব নিমেষেই ধ্বংস করতে সাহায্য করবে।
জীবাণুমুক্ত এবং নিরাপদ জল নিশ্চিত করতে কী করবেন?
ট্যাঙ্কের জলকে জীবাণুমুক্ত এবং নিরাপদ রাখতে মাসে অন্তত একবার ট্যাঙ্ক ঠিকঠাক ঢেকে রাখা আছে কিনা সেগুলি পরীক্ষা করে দেখুন। আর প্রতি ছয়মাস অন্তর ট্যাঙ্ক তো পরিস্কার করবেনই। কারণ ৬ মাসের বেশি ট্যাঙ্ক অপরিষ্কার থাকলে জীবাণু বেশি জমতে পারে। আর নিয়মিত জল ছেঁকে পান করুন এবং জলের মান পরীক্ষা করুন।
সতর্কতা
কোন রাসায়নিক যেমন ব্লিচ, ফিনাইল ইত্যাদি বেশি পরিমাণে ব্যবহার করবেন না। কারণ এটি পানীয় জলকে আরো বেশি পরিমাণে দূষিত করে দিতে পারে। জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার সময় পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল নিশ্চিত করুন। কারণ গ্যাস জমে গেলে আপনার শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অনেকদিন ট্যাঙ্ক পরিষ্কার না করলে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিন।
বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করানোর ঝামেলায় এবার থেকে আর পড়তে হবে না। যদি আপনি সঠিক এই নিয়মগুলি মেনে পরিষ্কার করতে পারেন, কিছু সহজ উপায় জানলেই এই কঠিন কাজ সহজ হয়ে যাবে। এতে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, জল দূষণমুক্ত রাখতে প্রতি ছয় মাস অন্তর জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার রাখুন এবং নিজে সুস্থ থাকুন।