সৌভিক মুখার্জী, কলকাতাঃ যত দিন গড়াচ্ছে ততো পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) অর্থনীতির উপর চাপ বাড়ছে। একদিকে সরকারি খরচ বৃদ্ধি হচ্ছে, অন্যদিকে রাজস্বের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। আর এই দুইয়ের সম্মেলনে রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটছে ক্রমশ। আর এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে ভয়ংকর এক তথ্য।
জিএসটি (GST) থেকে রাজস্ব আয়ের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে উঠেছে। এমনকি উড়িষ্যা এবং বিহারের মতো রাজ্যও পশ্চিমবঙ্গের থেকে এগিয়ে রয়েছে। এই তথ্যে প্রকাশ্য আসতেই রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নানারকম বিতর্ক।
পশ্চিমবঙ্গের জিএসটি আয় কত? | West Bengal GST Income |
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথম ১১ মাসের হিসাব করলে পশ্চিমবঙ্গের মোট জিএসটি আদায় হয়েছে ৬১ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। তবে এই অংকটি শুনতে খুব একটা বড় মনে হলেও এতে মাত্র ৭% বৃদ্ধি হয়েছে আগের বছরের তুলনায়। এই বৃদ্ধির হার দিল্লি, হরিয়ানা, উড়িষ্যা, মহারাষ্ট্রের তুলনায় অনেক অংশে কম।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, জিএসটি বৃদ্ধির হারে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে রয়েছে, যা রাজ্যের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অন্য রাজ্যগুলোর পরিস্থিতি কেমন?
কেন্দ্র সরকারের রিপোর্ট অনুসারে, দিল্লির জিএসটি বৃদ্ধি হয়েছে ১৭%, হরিয়ানার জিএসটি বৃদ্ধি হয়েছে ১৬%, উড়িষ্যার জিএসটি বৃদ্ধি হয়েছে ১১%, মহারাষ্ট্র ও পাঞ্জাবের জিএসটি বৃদ্ধি হয়েছে ১২%। এছাড়া কর্ণাটক, গুজরাট, বিহার, উত্তর প্রদেশ ও অসমের জিএসটি বৃদ্ধি হয়েছে ১০%।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এই বৃদ্ধির হার মাত্র ৭%। যা যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত উড়িষ্যা এবং বিহারের মতো রাজ্যগুলির তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে।
কেন কমছে পশ্চিমবঙ্গে জিএসটি আয়?
জিএসটি আয় মূলত ব্যবসা-বাণিজ্য এবং মানুষের কেনাকাটার উপর সরাসরি নির্ভরশীল। কোন রাজ্যের জিএসটি আয় কম হওয়ার মূল অর্থ হলো সেই রাজ্যে বাজারের কেনাকাটা দিনের পর দিন কমছে, ব্যবসায়িক কার্যক্রমে স্থিরতা আসছে এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ততটা বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে রাজ্য সবথেকে বেশি জিএসটি আদায় করেছে। ফলে ভবিষ্যতে এই প্রবণতা আরো বাড়তে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।
কী বলছে নবান্ন?
রাজ্য সরকার দাবি করছে, শুধুমাত্র জিএসটি নয়, অন্যান্য কর এবং রাজস্ব খাত মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করেছে রাজ্য। অর্থাৎ, রাজ্যের সামগ্রিক রাজস্ব আদায়ের অবস্থা খুব একটা খারাপ নয়।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় বাজেটে মধ্যবিত্তদের আয়করের পরিমাণ অনেকটা কমানো হয়েছে। যার ফলে আগামী বছরে কেনাকাটা আরো বাড়তে পারে। সেই জন্য জিএসটি এর থেকে আরো আয় বাড়তে পারে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: আর লাইনে দাঁড়াতে হবে না! এবার ATM থেকেই তোলা যাবে PF-র টাকা
ভবিষ্যতে কী হবে?
জিএসটি বৃদ্ধির হার কম থাকলেও রাজ্যের অর্থনীতি পুরোপুরি স্থির হবে না, এটা আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য। রাজ্য সরকার ভবিষ্যতে কর আদায় বাড়ানোর জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। বাজারের কেনাকাটা বৃদ্ধি পেলে রাজ্যের জিএসটি আয় স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাবে।
তবে রাজস্ব বৃদ্ধি করতে হলে ব্যবসায়িক পরিবেশ আরো উন্নত করতে হবে এবং শিল্পবৃদ্ধি ও মানুষের আয় বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ এখন সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারবে কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে।